মুসলিম বিবাহিতা নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ও আইনগত বিধান
একজন মুসলমান পুরুষ যেকোন সময় কোন কারণ ব্যাতিরেখে তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারে। এইকেত্রে কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া একজন পুরুষ স্বাধিনভাবে তার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান ‘মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন-১৯৩৯’ এইকেত্রে মুসলিম স্ত্রীদেরকে ও বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষমতা প্রদান করেছে।
মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন-১৯৩৯ এর ২(দুই) ধারা এর বিভিন উপধারা অনুযায়ী একজন মুসলিম স্ত্রী নিম্ন রুপ ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদর অধিকারী। নিম্নলিখিত যে কোন এক বা একাধিক কারণে মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহিত কোন মহিলা তার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ডিগ্রী লাভের অধিকারি হবেন।
১)যদি চার বৎসর কাল যাবত স্বামীর অবস্থান জানা না থাকে
২)স্বামী দুই বৎসর যাবতকাল যদি তার ভরন-পোষন দানে অবহেলা প্রদর্শন করেন বা ব্যার্থ হন।
২(ক) যদি স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পরিবার আইন লংঘন করিয়া অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহন করেন। ৩)যদি স্বামী সাত বৎসর বা তদূর্থ সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়।
৪)যদি স্বামী কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ব্যাতিত তিন বৎসর কাল তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হন।
৫)যদি বিবাহকালে স্বামী পুরুষত্বহীন থাকেন এবং উহা এখনও অব্যাহত আছে।
৬ )যদি,দুই বৎসর কাল যাবৎ স্বামী পাগল হয়ে আছেন অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে কিংবা ভয়ানক ধরনের সংক্রামক রোগে ভুগিতেছেন।
৭)যদি আঠারো বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তার পিতা বা অন্য অভিভাবক কতৃক বিবাহ প্রদত্তা হয়ে উনিশ বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সে উক্ত বিবাহ অস্বীকার করে।তবে শর্ত এই যে,ঐ সময়ের মধ্যে দাম্পত্য মিলন অনুষ্ঠিত হবেনা।
৮)যদি স্বামী তার সহিত নিষ্ঠুর আচরণ করেন, অর্থাৎ
ক)অভ্যাসগত ভাবে তাকে আঘাত করে বা নির্মম আচরণ দ্বারা তার জীবন কে দুর্বিসহ করেন যদিও উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়ে, অথবা
খ)দুর্নাম রয়েছে এমন স্ত্রী লোকদের সহিত মেলামেশা করেন অথবা কলঙ্কিত জীবন যাপন করেন,অথবা
গ)তাকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করার চেষ্ঠা করেন , অথবা
ঘ)তার সম্পত্তি হস্তান্তর করেন অথবা উহার উপর বৈধ অধিকার সমূহ প্রয়োগ করা থেকে বাধা দেন, অথবা
ঙ)তার ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করে থাকেন, অথবা
চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সে কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী ন্যায়পরায়ণতার সহিত তার সঙ্গে আচরণ না করেন।
৯)মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য বৈধ কারণ হিসেবে স্বীকৃত অন্য যে কোন কারণে -তবে এই শর্ত যে,
ক) কারাদণ্ড চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত (৩)নম্বর কারণে কোন ডিগ্রী প্রদান করা চলবে না।
খ)উপধারা (১)এর ভিত্তিতে প্রদত্ত ডিগ্রীটি উহা প্রদানের তারিখ হতে ৬ মাস পর্যন্ত কার্যকরি হবে না এবং স্বামী উক্ত সময়ে মধ্যে স্বয়ং অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন এজেন্টের মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে এই মর্মে যদি
আদালতকে খুশী করতে পারেন যে,তিনি দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছেন, তা হলে আদালত ডিগ্রীটি বাতিল করে দিবেন এবং
গ)উপধারা (৫)এর ভিত্তিতে ডিগ্রী প্রদানের পূর্বে স্বামীর আবেদনক্রমে উক্ত ডিগ্রী প্রদানের এক বৎসরের মধ্যে তিনি পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি লাভ করেছেন বা তার পুরুষত্বহীনতার অবসান ঘটেছে এই মর্মে আদালত কে সন্তূষ্ট করার জন্য আদালত তাকে নির্দেশ দান করতে পারেন এবং তিনি উক্ত সময়ের মধ্যে আদলতকে এই মর্মে সন্তূষ্টি করতে পারেন,তা হলে উক্ত কারণে কোন ডিগ্রী প্রদান করা যাবে না।